অনলাইনের মাধ্যমে বিদেশী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কি ডিগ্রি নেওয়া সম্ভব?
অনলাইনের মাধ্যমে বাইরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি নেওয়া কি সম্ভব?
পৃথিবীতে অসম্ভব বলে কিছু নেই বর্তমান ডিজিটাল এই যুগে । মানুষ মানুষকে সৃষ্টি করা ছাড়া বর্তমানে সবকিছুই প্রায় তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে মানুষ। তাহলে পড়া লেখার কথা তো আর মনে হয় বলতেই হয় না তবোও যারা জানেন না তাদেরকে এই বিষয় জাননোর জন্যয় আজকের এই পোষ্টটি । যেহেতু ডিজিটাল এই যুগে মানুষ অনলাইনের মাধ্যমে অনেক পূথীবির বাহিরে পর্যন্ত যেতে পেরেছে সুতরাং আপনি ঘরে বসেই ডিগ্রি নিতে পারবেন, যেটা বর্তমানে স্বাভাবিক। তবে আপনাকে জেনে বুঝে শুরু করতে হবে।
অনলাইনে/ওয়েব-নির্ভর শিক্ষাদান পদ্ধতিকে বলে অনলাইন এডুকেশন বা ই-লার্নিং। বর্তমান প্রচলিত শিক্ষাপদ্ধতির সিলেবাসের সঙ্গে এ পদ্ধতির খুব বেশী একটা পার্থক্য নেই। দূরশিক্ষণের মাধ্যম দুটি_অনলাইন ও অফলাইন। ক্যাম্পাস-নির্ভর না হওয়ায় শিক্ষার্থীকে সরাসরি ক্লাসে উপস্থিত থেকে শিক্ষা অর্জন করতে হয় না। একটি ইন্টারনেটযুক্ত কম্পিউটার অথবা টেবলেটই যথেষ্ট। আমেরিকার শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছেন, অনলাইন শিক্ষায় গ্র্যাজুয়েট ও প্রফেশনালরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে কাজ করছে।
আর এটিই কিন্তু অনলাইন শিক্ষায় ডিগ্রিধারীদের দক্ষতা ও যোগ্যতার কথাই প্রমাণ করে। ইউনিভার্সিটি অব ফিনিক্স এর এক সূত্রে জানা যায়, শুধু আমেরিকা থেকেই দশ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে অনলাইনে ডিগ্রি অর্জন করেছে গত বছর। পেশাজীবীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় বিকল্প শিক্ষা মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে অনলাইন শিক্ষা। তবে এর অন্যতম কারণ হচ্ছে সরাসরি ক্লাসে উপস্থিত হয়ে শিক্ষা অর্জন করার চেয়ে অনলাইনে ইচ্ছামতো সময়ে পড়ালেখা অনেকটাই সহজ।
অনলাইনে শিক্ষাদান পদ্ধতি
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের সহজ শর্তে অনলাইনভিত্তিক ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষাদান করে থাকে। উচ্চগতির ইন্টারনেটযুক্ত কম্পিউটারের মাধ্যমে অনলাইনে লাইভ ক্লাসে অংশ গ্রহন করা যায় । বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেও ক্লাস নিয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ই-মেইলে সরবরাহ করা পাসওয়ার্ডসহ লগইন আইডি অথবা ইউজার আইডি দিয়ে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর শিক্ষার্থীরা তাদের নিবন্ধিত কোর্সের ক্লাসসহ সংশ্লিষ্ট সব ধরনের তথ্যসহায়তা পেতে পারে। তবে শিক্ষার্থীকে অবশ্যই সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপূর্ব শর্ত পূরণ করে প্রয়োজনীয় ফি পরিশোধের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে।
ই-মেইলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও তথ্য সরবরাহ করে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ বং ডাকযোগে শিক্ষা-সরঞ্জাম পাঠানো হয় শিক্ষার্থীর ঠিকানায়।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন এডুকেশন প্রোগ্রামের আওতায় শতাধিক বিষয়ের ওপর বিভিন্ন পর্যায়ে তিন সহস্রাধিক কোর্স চালু আছে। ডিপ্লোমা, ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও পিএইচডিসহ অ্যাসোসিয়েট, প্রফেশনাল সার্টিফিকেট ডিগ্রিগুলো অনলাইন এডুকেশনের অন্তর্ভুক্ত। অ্যাকাউন্টিং, বিজনেস নার্সিং,ম্যানেজমেন্ট, হেলথ সায়েন্স, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ইনফরমেশন টেকনোলজি, সোশ্যাল সায়েন্স, হিউম্যান সার্ভিস ক্রিমিনাল জাস্টিস প্রভৃতি বিষয়ে অনলাইন ডিগ্রি দেওয়া হয়।
অনলাইনে শিক্ষার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এখানে ভিসার জন্য ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয় না। বিদেশে পড়তে গেলে থাকা-খাওয়া-যাতায়াতের জন্য যে বাড়তি টাকা গুনতে হয়, তাও বেঁচে যায়। একজন শিক্ষার্থী যেকোনো সময় বিশ্বের যেকোনো যায়গা থেকেই ইন্টারনেট যুক্ত কম্পিউটার/মোবাইলের মাধ্যমে ভার্চুয়াল ক্লাসে উপস্থিত থেকে অথবা যে কোন নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে। এখানে আরোও বড় একটা সুবিদা হলো শিক্ষাবিরতি ও বয়সের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। আবার একটি বিষয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থী আরোও ভিন্ন ভিন্ন অনেক বিষয়েও অনলাইন শিক্ষা নিতে পারে, যা প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় প্রায় অসম্ভব। একজন পেশাজীবী কিংবা শিক্ষার্থী তার অন্যান্য কাজের অবসরে খুব সহজেই শিক্ষা নিতে পারবে ঘরে বসেই। সেশনজট না থাকায় কাঙ্ক্ষিত ডিগ্রি অর্জনে নির্দিষ্ট সময়ের বেশি সময় অপচয় হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।
পরীক্ষা পদ্ধতি ও খরচ ?
পরীক্ষার পদ্ধতি হলো মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিতে হয় অনলাইনে নির্ধারিত সময়ে । অ্যাসাইমেন্টের ওপর থাকে ৩০ । ৬০ নম্বর নির্ধারিত থাকে সরাসরি অনলাইন পরীক্ষার জন্য, । বাকি ১০ নম্বর দেওয়া হয় নির্ধারিত অনলাইন ফোরামে অংশগ্রহণের ওপর ভিত্তি করে ।
ছয়টি গ্রেডে পরীক্ষার ফল প্রণয়ন করা হয়। সর্বোচ্চ গ্রেড 'এ' নির্ধারণ করা হয় ৯০ থেকে ১০০ নম্বর প্রাপ্তির ক্ষেত্রে। 'বি', 'সি' ও 'ডি' গ্রেড নির্ধারণ করা হয় যথাক্রমে ৮০ থেকে ৮৯, ৭০ থেকে ৭৯ এবং ৬০ থেকে ৬৯ নম্বর প্রাপ্তির ক্ষেত্রে। পাস নম্বর অর্থাৎ ৫০ থেকে ৫৯ নম্বরের ক্ষেত্রে 'ই' গ্রেড বিবেচনা করা হয়।
এখানে কিন্তু তুলনামূলকভাবে অনেক কম খরচ। তবে ভারতের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন শিক্ষার খরচ অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক কম। ফি জমা দিতে হয় ইন্টারনেটে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে। নির্দিষ্ট ব্যাংকের মাধ্যমেও ফি জমা দেওয়া যায়। অনলাইনে ভর্তির আবেদন করার সময়ই ফি জমা দেওয়ার ব্যাপারে শিক্ষার্থীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বিদেশে অনলাইনে শিক্ষাদানকারী প্রতিষ্ঠান
অনলাইন-ভিত্তিক শিক্ষাদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কাপলান ইউনিভার্সিটি অন্যতম। শিক্ষার্থী প্রয়োজনীয় সব তথ্যের বিস্তারিত জানতে পারবেন বিশ্ববিদ্যালটির ওয়েবসাইট (online.kaplanuniversity. ed) থেকে। সরাসরি ভর্তির আবেদন করতে হলে লগঅন করতে হবে http://online.kaplanuniversity.edu/Pages/ApplyNow.aspx লিংকে। অনলাইন শিক্ষার সুযোগ রয়েছে এমন আরো কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব ঠিকানা দেওয়া হলো_ইউনিভার্সিটি অব Online College for Working Adults - University of Phoenix, বস্টন ইউনিভার্সিটি: Homepage | Boston University, ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি: IGNOU - The People's University, ভিসভাসভারায়া টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি: http://www.vtu.ac.in, আমেরিকান ইন্টার-কন্টিনেন্টাল ইউনিভার্সিটি: http://www.aiuonline.edu, ডেভরি ইউনিভার্সিটি: Online College Classes & Degree Programs | DeVry University, ওয়ালডেন ইউনিভার্সিটি: Accredited Online University, ইউনিভার্সিটি অব নটিংহাম: University of Nottingham, লিবার্টি ইউনিভার্সিটি: Online Master's, Bachelor's, & Doctoral Degrees | Liberty University, ওপেন ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া: Open University Malaysia
বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে অনলাইন শিক্ষা !
বাংলাদেশে অনলাইন শিক্ষা এখনো তেমন ব্যাপকতা পায়নি। এধরণের শিক্ষাব্যবস্থা চালু না হওয়ার বড় অন্তরায় স্বচ্ছ ধারণার অভাব। তা ছাড়া আরেকটি কারণ হচ্ছে সরাসরি শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে এ শিক্ষাব্যবস্থার সনদের মানের সমতা থাকলেও চাকরিসহ অনেক ক্ষেত্রেই এর যথাযথ মূল্যায়ন না করা। তা ছাড়া ইন্টারনেট বিষয়ে শিক্ষার্থীর বাস্তব জ্ঞানের অভাব এ শিক্ষা প্রসারের পথে আরেকটি বাধা। তবে তথ্যপ্রযুক্তি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে অনলাইন শিক্ষা যে আরো বেশি জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা পাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
অনলাইন শিক্ষা নেওয়ার আগে ।
অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ডিগ্রি মানসম্পন্ন হয় না। তাই বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ভালো করে খোঁজখবর নিন। সিলেবাস কতটুকু আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও যুগোপযোগী তাও যাচাই করে নিন। বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে। বাণিজ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর চাহিদাসম্পন্ন বিষয় বেছে নেওয়াই হবে সঠিক সিদ্ধান্ত। হয়তো আপনার জন্যই অপেক্ষা করছে বিশ্বের খ্যাতনামা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর ডিগ্রি!
বিঃ দ্রঃ এই আর্টিকেলে প্রচারিত সকল তথ্য সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট / বই / জার্নাল / ম্যাগাজিন / জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যম / প্রামাণ্যচিত্র থেকে সংগৃহীত।
প্রযুক্তি মেলার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url